আমাদের সমস্যাটা কোথায়? আমরা কি আসলেই তামাশার জাতি? এই বাংলাদেশে কি আসলেই কিছু হবে না?


আপনি যখন ভাববেন, এই দেশে আসলে কিছু হবে না, তখন শুধু আপনার মাধ্যমে যে এখানে কিছু হবে না সেটা নিশ্চিত। আপনিও হতাশ আবার আপনার কথা শুনে আরেকজনও হতাশ হয়ে যাচ্ছে।
আমরা কি আসলেই তামাশার জাতি? এই প্রশ্নের উত্তর দেয়ার আগে বুঝতে হবে আমাদের সমস্যাটা কোথায়? সমস্যা আমাদের মানসিকতায় আর মানবিকতায়। আমদের মানসিকতা দিনদিন হীন হয়ে পড়ছে (পূর্বে এমন ছিল না)। তার পেছনের মূল কারন হল লোভ আর দাম্ভিকতার উচ্চাশা। সমাজ ব্যবস্থায় সামর্থ্য মানুষকে দাম্ভিক করে তোলে, আর পৃথিবীময় এই চিত্র একই। একটি উদাহরণ দিয়ে বলি, একটি গ্রামে শুধু দুটো পরিবারে মনমালিন্য, কিন্তু কোন ঝগড়া নেই। হঠাৎ, সামর্থ্যবান পরিবারটি দাম্ভিক হয়ে হীন মানসিকতার পরিচয় দিল। অপর পরিবারের রাস্তা আটকানোর জন্য নিজের জমির উপর উঁচু প্রাচীর তুলে দিল। ফলে শুধু ওই পরিবার নয়, তার পেছনে যতগুলো বাড়ি ছিল সবাই চলাচলের পথ হারাল। আবার প্রাচীর উঁচু হওয়ায় অসংখ্য মানুষ নদীর হাওয়া থেকে বঞ্চিত হল। ফলাফল হল দুর্বিষহ গরম এবং চলাচল বন্ধ। অথচ সেই দাম্ভিক পরিবারটির কেউই গ্রামে থাকেন না।
এতে কি বা লাভ হল? ক্ষতি ছাড়া কিছুই হল না। এরকম অনেক ঘটনা আছে। আমরা চাই নিজেকে দাম্ভিক করে তুলতে। তাই অসুস্থ প্রতিযোগিতায় মেতে উঠি। সবাই চাই অন্যের ক্ষতি হয় হোক, নিজেরটা ১৬ আনা হতেই হবে। ১৬ আনা পূরণ করতে গিয়ে অন্যের ১৬ আনা ছাই হয়ে যাচ্ছে। যুগে যুগে দাম্ভিকতা কোনদিনই টেকে নি। সাম্রাজ্যের পর সাম্রাজ্য মাটিচাপা পড়েছে কেউ কিছুই করতে পারে নি। শরৎচন্দ্র তার লেখনিতে রূপক অর্থে বলেছেন, অতিকায় হস্তি হারিয়ে গেছে, কিন্তু তেলাপোকা ঠিকই টিকে আছে। অর্থাৎ পরিনতি এরকমই হবে। আবার যেসব মানুষ হাজার বছর বেঁচে আছেন, তারা কেউ দাম্ভিক ছিলেন না। ভালো মানসিকতায় মানবিক ছিলেন। ইতিহাস খুলে দেখুন। অন্যের ক্ষতি হয় এমন কোন কাজ করবেন না। বরং নিজের কিঞ্চিৎ ক্ষতি হলেও সেটা মেনে নেয়াই শ্রেয়। তাতে দুজনেই ভালো থাকবেন হয়ত।
এই বাঙ্গালী জাতিই ছিল পৃথিবীতে একমাত্র সুষ্ঠু মানসিকতার জাতি। আর আজ আমরা বলি তামাশার জাতি। সম্প্রতি কিছু ঘটনা ঘটেছে, যেখানে, বিভিন্ন ছবি সামাজিক মাধ্যমে দিয়ে বলা হচ্ছে তামাশার জাতি। কেউ আবার লর্ড ক্লাইভের ডায়েরীর কথা তুলে দিয়ে বলছে তামাশার জাতি। কেউ অকথ্য ভাষায় গালাগাল দিয়ে লিখছে। বাকিরাও গালাগাল দিচ্ছে। ক্লাইভ ছিলেন জাতিতে ইংরেজ যিনি আমাদের তামাশার জাতি বলেছেন। আর আপনি নিজেই বাঙ্গালী হয়ে নিজের জাতিকে যখন বলছেন তামাশার জাতি, তখন আপনি নিজেকে কি হিসেবে পরিচয় দিচ্ছেন? ক্লাইভ না বাঙ্গালী? আপনি গরু হয়ে যদি গাধার বিচার করেন তাহলে তার যোক্তীকতা আছে। আপনি গাধা হয়ে যদি আরেক গাধাকে বললেন, গাধার জাতি, তাহলে নিজেই যে নিজেই গাধা বলছেন সেটা আপনি বোঝেন না। আর গালাগাল লিখে আপনি আপনার কি মানসিকতার পরিচয় দিচ্ছেন, সেটাও বোঝা যাচ্ছে।
আপনি যাদের কে বলছেন এরা তামাশা দেখতে আকাশে তাকিয়ে আছে এরা হয়ত বোঝেই না মানসিকতা আর মানবিকতা কি? কিভাবে হবে, যখন সবাই অসুস্থ মানসিকতায় মত্ত। এখন আপনি পারেন তাদেরকে বোঝাতে, সেটা না করে দিচ্ছেন গালাগাল। আপনি কার কাছে শিখবেন যিনি পিটিয়ে বলবেন ১-১০ মুখস্ত কর, নাকি মাথায় হাত বুলিয়ে বলবেন ১-১০ লিখতে শেখ। আমরা শিখতেও পারি না শেখাতেও পারিনা। ফলাফল, মানসিকতাও নেই, মানবিকতাও নেই।
বাংলাদেশে কি আসলেই কিছু হবে না?
দেশের কি দোষ রে ভাই, আপনি কাজ করেন না, তো দেশের দোষ কি? দেশে কিছু হবে না, তাই আপনি বিদেশে স্থায়ী হতে চান। আপনি চলে গেলে আপনার কাজ কে করবে? বরং আপনি যে উন্নয়ন করতে পারতেন সেখানে আপনি বিভিন্ন দোহাই দিয়ে আপনার দায়িত্তে ইস্তফা দিয়ে পরবাসী হচ্ছেন। আর দোষ হচ্ছে দেশের। সবাই যে যার যার জায়গায় বসে তামাশা করছে এটা আমরা বুঝি না। বাংলাদেশে কিছু হতে হলে আপনাকে দরকার। আপনি বলুন, কিছু হবে কিনা?
ভালো থাকবেন।

Comments

Popular posts from this blog

"আমি বাঁচার জন্য খাই, খাওয়ার জন্য বাঁচি না"

চেষ্টা আর সহযোগিতা একে অন্যের পরিপূরক

"মানুষ কয়েকশো বছরের মহামারীর ধরন থেকেও শিক্ষা লাভ করতে পারেনি"