চেষ্টা আর সহযোগিতা একে অন্যের পরিপূরক



নতুন বছরে শুভেচ্ছা জানানো একধরনের সৌহার্দ্যপূর্ণ রীতি হলেও এর গ্রহনযোগ্যতা আসলে কতটুকু সেটা নিয়ে আসলেই আমার সন্দেহ আছে। পৃথিবীতে প্রতিবছর এই সময়টায় শুভ জিনিসের কামনা করা হলেও বছর শেষে দেখা যায়, তিক্ততা বছর পরিবর্তনের সাথে সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। মানুষ বলে, যায় দিন ভালো, আসে দিন খারাপ। তাই এই সন্দেহ আরকি! তারপরও মানুষ আশায় বাঁচে। আশাই জীবন।
যা হোক একটা কিছু বলতে ইচ্ছে করছে। সবাই তো কত আশা করে, আমার একটি আশা একটু ভিন্নরকম। আমরা অনেকেই এটি এড়িয়ে চলে যাই। এটা হয়ত আমাদের জীবনটা শুভ ও সুন্দর করতেও পারে।  
আমি মনে করি চেষ্টা আর সহযোগিতা একে অন্যের পরিপূরক। এটা আবার কি? বলছি। আমরা যা করি, আমরা যা মানি তার সবকিছুতেই আমরা অন্যের চেয়ে আলাদা বললেও আমরা আসলে অন্যেরটা অনুকরণের চেষ্টা করি। যেমন, কেউ অভিনেতা উত্তমকুমার হতে চান, বা কেউ লিঙ্কিন পার্ক এর মত মানুষকে মাতাতে চান। সবাই এরকম কিছু না কিছু হতে চান। এখানে দোষের কিছু নাই। কারন এটি তার অনুপ্রেরণার জায়গা। তাই চেষ্টাটা শুরু হয়। এটা ভালো। বলে রাখা ভালো যে সবাইকে এক মাপকাঠিতে একি জিনিস বিচার করে মাপা যায় না। যেমন, ১ কেজিতে ৭-৮ আপেল পাওয়া গেলেও আঙ্গুর হয়ত ১০০ + পাওয়া যায়। আমরা মানুষ বিচারের বেলায় সেটাই চেষ্টা করি।
ধরুন, আপনার সন্তান পড়ালেখায় খুব একটা ভালো না হলেও, হয়ত সে গানে ভালো। কিন্তু আপনি তাকে বিচার করেন, পাশের বাসার ভাবির ছেলে/মেয়ের ফলাফলের সাথে। বিচার কখনও কখনও এতই অমানবিক হয় যে, এ প্লাস পাওয়ার পরেও কেন তার চেয়ে ১০ নম্বর কম পেল সেটার জন্য আশার চেয়ে নিরাশার বানী শুনতে হয়। আর যারা ভালো ফল করেন, তারা আবার কেউ কেউ/পরিবার নিজেকে/তাদের সেরা বলে দাবি করেন।
এত কষ্ট করলাম, আর ফলাফল এই !!! সেটা যেকোনো মানুষের যেকোনো ফলাফলই হতে পারে। তাহলে এই ক্ষেত্রে কি করা উচিত? অনেকে অনেক চেষ্টা করেও একটা চাকরি পায় না। আবার কারো ক্ষেত্রে চাকরি দৌড়ায়। চেষ্টা আর সহযোগিতার কথা এখান থেকেই শুরু করি একটি বাস্তব রুপক সত্য দিয়ে।
একটা বাচ্চা জন্মের পর জানে না কিভাবে কথা বলতে হয়। কিভাবে হাঁটতে হয়, কিভাবে পড়তে হয়। কিভাবে বসতে হয় আর কিভাবে অন্যকে বোঝাতে হয়। আপনি তাকে বলতে শেখান। সে অনুকরন করার চেষ্টা করে কিন্তু পারে না। আপনি আবার বলেন, বারবার বলেন। সে বারবার চেষ্টা করে, একটা সময়ে সে আপনাকে ডাকতে পারে। এরমধ্যে হয়ত সে ১০০ বার চেষ্টা করেছে। আর আপনি ৫০০ বার বলেছেন। এখানে আপনি ও বাচ্চা দুজনেই কিন্তু সফল। আবার হাঁটতে গিয়ে সে দাঁড়াতে পারে না। আপনি তাকে আপনার সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়ে একদিন তাকে হাঁটাতে শেখান। ব্যাথা পেলে কাঁদতে হয়, সেটা যেকোনো বয়সের মানুষই কাঁদে। আপনি বাচ্চাকে শেখান হাঁটতে গিয়ে পড়ে গেলে না কাঁদতে। অনুপ্রেরণা দেন আবার হাঁটতে, উঠে দাঁড়াতে, এবং এক সময়ে সে উঁচু থেকে পড়ে গেলেও উঠে দাঁড়িয়ে বলে ব্যাথা পাই নি। এখানে আপনি ও বাচ্চা দুজনেই আবার সফল। এটা যেকেউ যেকোনো বাচ্চার জন্যই করেন। পরিবারের বা বাইরের যে কেউ।  
এই রুপক সত্য আপনারা বিশ্বাস করেন কিনা জানি না, তবে আমরা সবাই একটা বয়স পেরিয়ে গেলে সাহায্য আর প্রযোজ্য নয় বিশ্বাস করি। আপনার বাচ্চা এখন ভালো নম্বর না পেলে তাকে সেই একইরকম সহযোগিতা আর অনেকেই করেন না। সমাজের অন্যরা বরং সহযোগিতা করতে চান না পাছে সে এগিয়ে যায়। চাকরি পাচ্ছে না, কারন তার হয় যোগ্যতা নেই বা জোর নেই। আজকে সেই মাদকে আসক্ত যাকে ফিরিয়ে আনার জন্য কেউ সহযোগিতা করেন না। কেন তাকে সাহায্য করতে হবে, সে নিজে পারে না? আপনি যখন একটি ভুল করেছেন তখন আপনাকে অবশ্যই কেউ শুধরে দিয়েছে। এখন আপনি সেটা করেন না, ভাবেন আপনার সম্মান কমে যাবে।    
কেউ চেষ্টা করে না এটা কোনভাবেই বিশ্বাসযোগ্য নয়। আজকে যে চেষ্টা না করে বসে আছে, কখনও শুনেছেন, সে কেন চেষ্টা করে না? একটাই উত্তর, “চেষ্টা করে লাভ কি?” অর্থাৎ, সে কোন কাজে বিফল হয়েছে, যার কারনে সে সকল কাজের চেষ্টাই বন্ধ করে দিয়েছে। আপনি তাকে সাহায্য করেন না বরং আরও কটাক্ষ করেন। আমরা সবাই সেটা প্রায়ই করি। সহযোগিতা ছাড়া কেউ দাঁড়াতে পারে না এটা আপনি না মানলেও আমি মানি। মহাপুরুষদের উদাহরণ টেনেও যদি আপনি তর্কে আসতে চান, তাহলেও ঘেঁটে দেখুন, তারা হাজারবার চেষ্টা করার পর কেউ তাদেরকে কোন সময়ে একটা সুযোগ দিয়েছে, আর সেটাই তার কাজে লেগেছে। আপনি বলবেন যে সারাদিন বসে গবেষণা করেছে তাকে কে সহযোগিতা করেছে? তাকে সহযোগিতা করেছে তার আশপাশের কোন মানুষ, যে তাকে তার অবাস্তব কাজগুলো সারাদিন মেনে নিয়েও তাকে কিছু বলেনি। কেউ কেউ তো কটাক্ষ করেছেই, কিন্তু কেউ তো তাকে মেনে নিয়েছে।
আপনার সন্তান গানপাগল হলেও তাকে আপনি বই ধরিয়ে গিটার ভেঙ্গে ফেলেন। সে হতাশাগ্রস্থ হয়, একসময়ে সে শেষ হয়ে যায়। অনেকে পালিয়ে যায়, উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে। পড়ে যায়, আবার উঠে দাঁড়ায়। আমি যেটা বোঝাতে চাইছি, সবাইকেই সাহায্যের হাতটা বাড়িয়ে দিন সেটা যেকোনো কাজে। কেউ টাকা উপার্জন করার প্রবল চেষ্টা করে। কেউ অনৈতিক পথে তখনি যাই যখন কেউ তাকে সৎ পথের সন্ধান দেয় না। একজন চোর জন্ম থেকে চোর হয় না। তাকে কেউ চোর বানায়, আর সে নিজের চেষ্টায় দক্ষ চোর হয়।
আপনি বলবেন অন্যকে সহযোগিতা করে আমার লাভ কি? আপনি যে কাউকে সহযোগিতা করলে সে সফল নাও হতে পারে। কিন্তু আপনার সহযোগিতা তাকে পরবর্তীতে উঠে দাঁড়াতে সাহায্য করবে। যদি সে স্বীকার নাও করে, তারপরও আপনি নিজের কাছে সফল। কাউকে সহযোগিতা করাও যে আপনার একটা প্রবল চেষ্টা সেটা আপনি হয়ত বোঝেনই না। আমরা সবাই যেভাবে বাচ্চাদের উঠে দাঁড়াতে সাহায্য করি, সেটা যেকোনো বয়সের মানুষের বেলায় করলে সেও উঠে দাঁড়ানোর সুযোগ পাবে। আর কেউ যদি চেষ্টা না করে, তাকেও চেষ্টা করানোর মত অবস্থায় আনতে আপনাকে অনুপ্রেরণা যোগাতে হবে। কাউকে টেনে ধরা নয়, সৎপথে তুলে ধরার চেষ্টা করুন। সেও আপনাকে একদিন কোন মঞ্চে তুলে ধরবে। সবাইকে এক ভাবে বিচার করার চেয়ে তাকে তার মত করে বিচার করার চেষ্টা করুন। আর আপনি যদি করতে না পারেন তাহলে অন্তত একটা মাকড়শা ধরে আনার পরামর্শ দিন। যাতে মাকড়শা তাকে রবার্ট ব্রূস হতে সাহায্য করে। কেউ হারিয়ে গেল আমরা যেমন অন্যের সহযোগিতায় তাকে খুঁজে বের করার চেষ্টা করি, সবক্ষেত্রও তাই। আপনার চেষ্টা ও সহযোগিতা তাকেও সহযোগিতা ও চেষ্টা করার শিক্ষা দেবে। আপনি চেষ্টা ও সহযোগিতা করতে না চাইলে কেউ আপনাকে হয়ত দোষ দেবে না, পাশাপাশি আপনি যে অন্য কারো সহযোগিতা পাবেন না সেটাও নিরধারিত। একটি সিধান্ত সবাইকে আস্তে আস্তে ভালোভাবে চলতে সাহায্য করবে। কেউ বিপথে যাবে না, ধ্বংস হবে না, যুদ্ধ হবে না। জীবনটাও সুন্দর হবে। আপনি বলবেন বলা তো সহজ, করাটা কি? তাহলে বলব, আপনি সেই চেষ্টা থেকেই আবার সরে গেলেন।      
ভালো থাকবেন।

Comments

Popular posts from this blog

"আমি বাঁচার জন্য খাই, খাওয়ার জন্য বাঁচি না"

"মানুষ কয়েকশো বছরের মহামারীর ধরন থেকেও শিক্ষা লাভ করতে পারেনি"